লেখক পরিচিতি
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯০৩ সালে নোয়াখালি জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আব্দুল মজিদ ও মাতা ফতেমা খাতুন। শৈশবেই তাঁর পিতা মারা যাওয়ায় কুমিল্লায় নানাবাড়িতেই তিনি বেড়ে ওঠেন। কুমিল্লার ইউসুফ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাশ করেন। ১৯৪৩ সালে বহিরাগত হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম কলেজে চাকুরি করেন। একজন সংস্কৃতিবান ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি তাঁর রচনায় সংস্কৃতি, ধর্ম, মানবতাবোধ ও মানুষের জীবনাচরণের মৌলিক বিষয়গুলো সংজ্ঞায়িত ও উন্মোচিত করতে চেয়েছেন এবং বিচিত্র ও সুন্দরভাবে বাঁচার মধ্য দিয়ে মহত্তম জীবনের সন্ধান করেছেন। তাঁর গদ্যশৈলীতে প্রমথ চৌধুরীর এবং মননে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব লক্ষণীয়। তিনি ছিলেন মূলত প্রবন্ধকার। গুণগ্রাহী বন্ধুরা মৃত্যুর পর তাঁর রচনা সংকলন করে ‘সংস্কৃতি কথা’ (১৯৫৮) নামে একটি প্রবন্ধ-গ্রন্থ বের করেন। ‘সভ্যতা’ ও ‘সুখ’ তাঁর দুটি অনুবাদগ্রন্থ। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভূমিকা
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের ‘মনুষ্যত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ। মানুষের দুটি সত্তা- একটি তার জীবসত্তা, অপরটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে সহায়তা করে। আবার মানুষের জীবসত্তাকে অস্বীকার করা যায় না। জীবসত্তার প্রয়োজন মিটিয়ে তবে মনুষ্যত্বের বিকাশ হয়। এ বিকাশে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার কাজ জ্ঞান সৃষ্টি বা বিতরণ করা নয়; মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
মূলপাঠ
মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জীবসত্তা সেই ঘরের নিচের তলা, আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব ওপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই আমাদের মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্য জীবসত্তার ঘরেও সে কাজ করে; ক্ষুৎপিপাসার ব্যাপারটি মানবিক করে তোলা তার অন্যতম কাজ। কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্য কথায়, শিক্ষার যেমন প্রয়োজনের দিক আছে, তেমনি অপ্রয়োজনীয় দিকও আছে। আর অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক। সে শেখায় কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়, কী করে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করা যায়।
শিক্ষার এ দিকটা যে বড় হয়ে ওঠে না, তার কারণ ভুল শিক্ষা ও নিচের তলায় বিশৃঙ্খলা জীবসত্তার ঘরটি এমন বিশৃঙ্খল হয়ে আছে যে, হতভাগ্য মানুষকে সব সময়ই সে সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হয়। ওপরের তলার কথা সে মনেই আনতে পারে না। অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি। ধনী-দরিদ্র সকলেরই অন্তরে সেই একই ধ্বনি উত্থিত হচ্ছে : চাই, চাই, আরও চাই।
তাই অন্নচিন্তা তথা অর্থচিন্তা থেকে মানুষ মুক্তি না পেলে, অর্থসাধনাই জীবনসাধনা নয়- একথা মানুষকে ভালো করে বোঝাতে না পারলে মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারবে না। ফলে শিক্ষার সুফল হবে ব্যক্তিগত, এখানে সেখানে দু একটি মানুষ শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যটি উপলব্ধি করতে পারবে, কিন্তু বেশির ভাগ লোকই যে তিমিরে সে তিমিরে থেকে যাবে।
তাই অন্নচিন্তার নিগড় থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার যে চেষ্টা চলেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু লক্ষ্য সম্বন্ধে সচেতন না থাকলে সে চেষ্টাও মানুষকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু? প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলে আলো হাওয়ার স্বাদবঞ্চিত মানুষ কারাগারকেই স্বর্গতুল্য মনে করে। কিন্তু তাই বলে যে তা সত্যসত্যই স্বর্গ হয়ে যাবে, তা নয়। বাইরের আলো হাওয়ার স্বাদ পাওয়া মানুষ প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলেও কারাগারকে কারাগারই মনে করবে, এবং কী করে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাই হবে তার একমাত্র চিন্তা। আকাশ-বাতাসের ডাকে যে পক্ষী আকুল, সে কি খাঁচায় বন্দি হবে সহজে দানাপানি পাওয়ার লোভে? অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও মুক্তি বড়, এই বোধটি মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয়।
চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে মুক্তি নেই। মানুষের অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এই মুক্তির দিকে লক্ষ রেখে। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না বলেই ক্ষুৎপিপাসার তৃপ্তির প্রয়োজন। একটা বড় লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই অন্নবস্ত্রের সমাধান করা ভালো, নইলে আমাদের বেশি দূর নিয়ে যাবে না।
তাই মুক্তির জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। একটি অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা, আরেকটি শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা মানুষকে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ানোর সাধনা। এ উভয়বিধ চেষ্টার ফলেই মানবজীবনের উন্নয়ন সম্ভব। শুধু অন্নবস্ত্রের সমস্যাকে বড় করে তুললে সুফল পাওয়া যাবে না। আবার শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করলে সুদীর্ঘ সময়ের দরকার।
মনুষ্যত্বের স্বাদ না পেলে অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েও মানুষ যেখানে আছে সেখানেই পড়ে থাকতে পারে; আবার শিক্ষাদীক্ষার মারফতে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলেও অন্নবস্ত্রের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা ব্যর্থ হওয়া অসম্ভব নয়।
কোনো ভারী জিনিসকে ওপরে তুলতে হলে তাকে নিচের থেকে ঠেলতে হয়, আবার ওপর থেকে টানতেও হয়; শুধু নিচের থেকে ঠেললে তাকে আশানুরূপ ওপরে ওঠানো যায় না। মানব উন্নয়নের ব্যাপারে শিক্ষা সেই ওপর থেকে টানা, আর সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা নিচের থেকে ঠেলা। অনেকে মিলে খুব জোরে ওপরের থেকে টানলে নিচের ঠেলা ছাড়াও কোনো জিনিস ওপরে ওঠানো যায়Ñ কিন্তু শুধু নিচের ঠেলায় বেশিদূর ওঠানো যায় না। তেমনি আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষার দ্বারাই জীবনের উন্নয়ন সম্ভব, কিন্তু শুধু সমাজ ব্যবস্থার সুশৃঙ্খলতার দ্বারা তা সম্ভব নয়। শিক্ষাদীক্ষার ফলে সত্যিকার মনুষ্যত্বের ফলে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ কথাটা বুলিমাত্র নয়, সত্য। লোভের ফলে যে মানুষের আত্মিক মৃত্যু ঘটে, অনুভূতির জগতে সে ফতুর হয়ে পড়ে, শিক্ষা মানুষকে সে-কথা জানিয়ে দেয় বলে মানুষ লোভের ফাঁদে ধরা দিতে ভয় পায়।
ছোট জিনিসের মোহে বড় জিনিস হারাতে যে দুঃখ বোধ করে না, সে আর যাই হোক, শিক্ষিত নয়। শিক্ষা তার বাইরের ব্যাপার, অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠে নি। লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়। শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি; জ্ঞান পরিবেশন মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় হিসেবেই আসে। তাই যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া হয় না, সেখানে শিক্ষা নেই।
শিক্ষার মারফতে মূল্যবোধ তথা মনুষ্যত্ব লাভ করা যায়; তথাপি অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থাও প্রয়োজনীয়। তা না হলে জীবনের উন্নয়নে অনেক বিলম্ব ঘটবে। মনুষ্যত্বের তাগিদে মানুষকে উন্নত করে তোলার চেষ্টা ভালো; কিন্তু প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি না পেলে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছতে দেরি হয় বলে অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান একান্ত প্রয়োজন। পায়ের কাঁটার দিকে বারবার নজর দিতে হলে হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না, তেমনি অন্নবস্ত্রের চিন্তায় হামেশা বিব্রত হতে হলে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই দু দিক থেকেই কাজ চলা দরকার। একদিকে অন্নবস্ত্রের চিন্তার বেড়ি উন্মোচন, অপরদিকে মনুষ্যত্বের আহ্বান, উভয়ই প্রয়োজনীয়। নইলে বেড়িমুক্ত হয়েও মানুষ ওপরে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করবে না, অথবা মনুষ্যত্বের আহ্বান সত্তে¡ও ওপরে যাওয়ার স্বাধীনতার অভাব বোধ করবে, পিঞ্জরাবদ্ধ পাখির মতো উড়বার আকাক্সক্ষায় পাখা ঝাপটাবে, কিন্তু উড়তে পারবে না।
নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা :
অর্থসাধনা- অর্থ উপার্জনের চেষ্টা। আস্বাদন- রস গ্রহণ; স্বাদ গ্রহণ। উন্মোচন- উন্মুক্ত করা। উত্থিত- উৎপন্ন। কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু?- খাওয়া-পরার সমস্যা মিটে গেলেই জীবনের উন্নয়ন সম্ভব হয় না; এ জন্য প্রয়োজন চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। শিক্ষার মাধ্যমেই এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়। জীবসত্তা- জীবের অস্তিত্ব। জীবন সাধনা- জীবন উন্নয়নের চেষ্টা। তিমির- অন্ধকার। নিগড়- শিকল; বেড়ি। পরিচায়ক- পরিচয় করিয়ে দেয় যে। পিঞ্জরবদ্ধ- খাঁচায় বন্দি। ক্ষুৎপিপাসা- ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। প্রাচুর্য- বাহুল্য; প্রচুরতা; আধিক্য। ফতুর- নিঃস্ব; সর্বস্বান্ত। বেড়ি- শিকল; শৃঙ্খল। মানবসত্তা- মানুষের অস্তিত্ব। মানবসত্তা বলতে লেখক মনুষ্যত্বকে বুঝিয়েছেন। শিক্ষার মাধ্যমে এই মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায়। অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি- লেখকের মতে আমরা জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে অধিক মনোযোগী। ফলে অর্থচিন্তা আমাদের সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে। অর্থচিন্তায় ব্যস্ত মানুষ প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জনে সক্ষম নয়। মারফতে- মাধ্যমে; দ্বারা। লেফাফাদুরস্তি- বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভিতরে ফাঁকি। হামেশা- প্রায়শই।
সারসংক্ষেপ :
মানুষের জীবন দোতলা ঘরের মতো। এর নিচতলা তার জৈবিক জীবন, আর উপরের তলা মনুষ্যত্ব। জৈবিক জীবনের জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে হয়। কিন্তু মানুষের জন্য এটুকু যথেষ্ট নয়। মনুষ্যত্বই তার আসল পরিচয়। শিক্ষা মানুষের মধ্যে এই মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটায়। মানুষের পরম লক্ষ্য হওয়া উচিত মুক্তি - চিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু ক্ষুধা-তৃষ্ণার নিবারণ না হলে সে লক্ষ্যে পৌঁছানো দুরূহ। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো দরকার যেন তা জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, আবার মূল্যবোধ ও মুক্তির আকাক্সক্ষাও জাগিয়ে রাখে।
সৃজনশীল প্রশ্ন-১
ইমদাদুল হক একজন বাস্তববাদী শিক্ষক। জীবনের বাস্তবতাকে বিবেচনা করে তিনি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দান করেন। তিনি বলেন, মুক্তির জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। একটি অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা, আরেকটি শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা মানুষকে মনুষত্বের স্বাদ পাওয়ানোর সাধনা। এ উভয়বিধ চেষ্টার ফলেই মানবজীবনের উন্নয়ন সম্ভব। বস্তুত শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি; জ্ঞান পরিবেশন মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় হিসেবেই আসে। তাই যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া হয় না, সেখানে শিক্ষা নেই।
ক. জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হওয়ার সোপান কী?
খ. শিক্ষার মাধ্যমে কীভাবে মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করে?
গ. উদ্দীপকের ইমদাদুল হকের চিন্তা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিককে তুলে ধরেছে? -আলোচনা করুন।
ঘ. “শিক্ষাকে বলা যায় মানুষের মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা।” Ñউদ্দীপক এবং ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করুন।
নমুনা উত্তর : সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্ন-১ এর নমুনা উত্তর:
ক. জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হওয়ার সোপান হল শিক্ষা।
খ. জীবসত্তার ঘর থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণের প্রক্রিয়া হচ্ছে শিক্ষা। মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। জীবসত্তা সে ঘরের নিচতলা, আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব সে ঘরের উপরের তলা। শিক্ষাই জীবসত্তাকে মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে। তবে জীবসত্তার ঘরেও তার কাজ করতে হয় অর্থাৎ মানুষের অন্নবস্ত্রের ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো।
গ. উদ্দীপকের ইমদাদুল হকের চিন্তা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মনুষ্যত্বের আলো প্রজ্বলনে শিক্ষার ভূমিকা তুলে ধরেছে। মানুষের পার্থিব জীবনে দুটি সত্তা রয়েছেÑ জীবসত্তা ও মানবসত্তা। জীবসত্তার প্রয়োজনে অন্নবস্ত্রের চিন্তা আসে। শিক্ষার ফলে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে অন্নবস্ত্রের সমাধান সহজ হয়। শিক্ষার আসল কাজ মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান দান নয়; জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায়মাত্র।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মূল্যবোধ হচ্ছে মনুষ্যত্বের মূল। মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে। উদ্দীপকের ইমদাদুল হকের মতে, মানুষের জীবনে এ মূল্যবাধ তথা মনুষ্যত্বের আলো প্রজ্বলিত হলে সে আলো ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীর সর্বত্র। মনুষ্যত্বের সে আলো প্রজ্জ্বলিত হবে একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধ অর্থাৎ মনুষ্যত্ব লাভ করা যায়; তথাপি মানবজীবনে অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থাও প্রয়োজনীয়। তা না হলে জীবনের উন্নয়নে অনেক বিলম্ব ঘটবে। উদ্দীপকের আলোচ্য বিষয়টিই ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. শিক্ষাকে বলা যায় মানুষের মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা। -উক্তিটি যথার্থ হয়েছে। মানুষের জীবনে দুটি সত্তা- জীবসত্তা ও মানবসত্তা। জীবসত্তার প্রয়োজনে অন্নবস্ত্রের চিন্তা আসে। শিক্ষার ফলে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে অন্নবস্ত্রের সমাধান সহজ হয়। শিক্ষার আসল কাজ মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান দান নয়; জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায়মাত্র।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মূল্যবোধ হচ্ছে মনুষ্যত্বের মূল। আর এর বিকাশ ঘটে মানুষের আনন্দ, প্রেম ও সৌন্দর্যবোধে। মানুষের জীবনে মনুষ্যত্বের আলো প্রজ্বলিত হলে সে আলো ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীর সর্বত্র। মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে। শিক্ষা বা জ্ঞান পরিবেশন মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় হিসেবে আসে। আর যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া যায় না, সেখানে শিক্ষাও নেই।
শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধ তথা মনুষ্যত্বের স্বাদ লাভ করা যায়। এর জন্য অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থারও প্রয়োজন। তা না হলে জীবনের উন্নয়নে অনেক বিলম্ব ঘটে। মনুষ্যত্বের তাগিদে মানুষকে উন্নত করে তোলার চেষ্টা ভালো, কিন্তু প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি না পেলে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছাতে দেরি হয়। তাই অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে যে মূল্যবোধ সৃষ্টি হয় তাই মনুষ্যত্ব। আর তাই শিক্ষাকে বলা যায় মানুষের মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা।
অ্যাসাইনমেন্ট : নিজে করুন
সৃজনশীল প্রশ্ন :
মুক্তচিন্তার মানুষ বলে জনাব সালেহিনের শিক্ষিত সমাজে পরিচিতি রয়েছে। তিনি মনে করেন, মানুষের মুক্তির জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করা উচিত। এর একটি মানুষকে অন্ন-বস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা, আর অন্যটি হচ্ছে শিক্ষার সাহায্যে তার মনুষ্যত্বের সাধনা। এ দুটি উপায়ে চেষ্টা করা হলে মানব জীবনে উন্নয়ন সম্ভব।
ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর গদ্যে কার প্রভাব লক্ষণীয়?
খ. ‘অর্থ চিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দী।’ -কথাটি বুঝিয়ে বলুন।
গ. উদ্দীকের সঙ্গে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মিলগুলো তুলে ধরুন।
ঘ. “উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ অংশকে ধারণ করেছে।” -বিশ্লেষণ করুন।