"মমতাদি" – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

"মমতাদি" – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (Momotadi - Manik Bandopadhyay)

 

লেখক পরিচিতি

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামাতার চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। তাঁর ডাকনাম মানিক এবং পিতার দেয়া নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁদের আদিনিবাস ছিলো বাংলাদেশে, ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। পিতার সরকারি চাকুরির কারণেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার এবং বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর অংকশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। শেষ অবধি সার্বক্ষণিক সাহিত্যিক রূপেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিলো মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। তিনি ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে। তিনি ৪২টি উপন্যাস ও দুই শতাধিক গল্প রচনা করেছেন। তাঁর ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ও ‘পদ্মানদীর মাঝি’ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৬ সনের ৩ ডিসেম্বর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :

উপন্যাস : জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মানদীর মাঝি, অহিংসা, চিহ্ন;

ছোটগল্প : অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প, প্রাগৈতিহাসিক, সরীসৃপ, বৌ, সমুদ্রের স্বাদ;

কবিতা : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা;

প্রবন্ধ : লেখকের কথা।


ভূমিকা

‘মমতাদি’ গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সরীসৃপ’ (১৯৩৯) গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। গল্পটিতে শৈশবে মনুষ্যসত্তার বিকাশে স্নেহ-ভালোবাসার গুরুত্ব, পেশা, সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে আত্মমর্যাদাবোধের নমুনা এবং গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করার দিকটি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

পাঠ-১

মূলপাঠ

শীতের সকাল। রোদে বসে আমি স্কুলের পড়া করছি, মা কাছে বসে ফুলকপি কুটছেন। সে এসেই বলল, আপনার রান্নার জন্য লোক রাখবেন? আমি ছোট ছেলে-মেয়েও রাখব। নিঃসঙ্কোচ আবেদন। বোঝা গেল সঙ্কোচ অনেক ছিল, প্রাণপণ চেষ্টায় অতিরিক্ত জয় করে ফেলেছে। তাই যেটুকু সঙ্কোচ নিতান্তই থাকা উচিত তাও এর নেই। বয়স আর কত হবে, বছর তেইশ। পরনে সেলাই করা ময়লা শাড়ি, পাড়টা বিবর্ণ লাল। সীমান্ত পর্যন্ত ঘোমটা, ঈষৎ বিশীর্ণ মুখে গাঢ় শ্রান্তির ছায়া, স্থির অচঞ্চল দুটি চোখ। কপালে একটি ক্ষত-চিহ্ন-আন্দাজে পরা টিপের মতো। মা বললেন, তুমি রাঁধুনী?

চমকে তার মুখ লাল হলো। সে চমক ও লালিমার বার্তা বোধহয় মার হৃদয়ে পৌঁছল, কোমল স্বরে বললেন, বোসো বাছা। সে বসল না। অনাবশ্যক জোর দিয়ে বলল, হ্যাঁ আমি রাঁধুনী। আমায় রাখবেন? আমি রান্না ছাড়া ছোট ছোট কাজও করব।

মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চারমাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে, কিন্তু খাবে না।

পনের টাকা মাইনে ঠিক হলো। সে বোধহয় টাকা বারো আশা করেছিল, কৃতজ্ঞতায় দুচোখ সজল হয়ে উঠল। কিন্তু সমস্তটুকু কৃতজ্ঞতা সে নীরবেই প্রকাশ করল, কথা কইল না। 

মা বললেন, আচ্ছা, তুমি কাল সকাল থেকে এসো।

সে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে তৎক্ষণাৎ চলে গেল। আমি গেটের কাছে তাকে পাকড়াও করলাম।

শোন। এখুনি যাচ্ছ কেন? রান্নাঘর দেখবে না? আমি দেখিয়ে দিচ্ছি এসো।

কাল দেখবো, বলে সে এক সেকেন্ড দাঁড়াল না, আমায় তুচ্ছ করে দিয়ে চলে গেল। ওকে আমার ভালো লেগেছিল, ওর সঙ্গে ভাব করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম, তবু, আমি ক্ষুন্ন হয়ে মার কাছে গেলাম। একটা বিস্মিত হয়েও। যার অমন মিষ্টি গলা, চোখে মুখে যার উপচে পড়া স্নেহ, তার ব্যবহার এমন রূঢ়!

মা বললেন, পিছনে ছুটেছিলি বুঝি ভাব করতে? ভাবিস না, তোকে খুব ভালোবাসবে। বার বার তোর দিকে এমন করে তাকাচ্ছিলো!

শুনে খুশি হলাম। রাঁধুনী পদপ্রার্থিনীর স্নেহ সেদিন অমন কাম্য মনে হয়েছিল কেন বলতে পারি না।

পরদিন সে কাজে এল। নীরবে নতমুখে কাজ করে গেল। যে বিষয়ে উপদেশ পেল পালন করল, যে বিষয়ে উপদেশ পেল না নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করল- অনর্থক প্রশ্ন করল না, নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখল না। সে যেন বহুদিন এবাড়িতে কাজ করছে বিনা আড়ম্বরে এমন নিখুঁত হলো তার কাজ। 


কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতা দেখে সকলে তো খুশি হলেন, মার ভবিষ্যৎ বাণী সফল করে সে যে আমায় খুব ভালোবাসবে তার কোনো লক্ষণ না দেখে আমি হলাম ক্ষুন্ন। দুবার খাবার জল চাইলাম, চার পাঁচ বার রান্না ঘরে দিয়ে দাঁড়ালাম, কিন্তু কিছুতেই সে আমায় ভালোবাসল না। বরং রীতিমতো উপেক্ষা করল। শুধু আমাকে নয় সকলকে। কাজগুলিকে সে আপনার করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না। মার সঙ্গে মৃদুস্বরে দুএকটি দরকারী কথা বলা ছাড়া ছটা থেকে বেলা সাড়ে দশটা

অবধি একবার কাশির শব্দ পর্যন্ত করল না। সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতোই ম্লানিমার ঐশ্বর্যে মহীয়সী কিন্তু ধরা ছোঁয়ার অতীত শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্বিকার।

রাগ করে আমি স্কুলে চলে গেলাম। সে কি করে জানবে মাইনে করা রাঁধুনীর দূরে থাকাটাই সকলে তার কাছে আশা করছে না, তার সঙ্গে কথা কইবার জন্য বাড়ির ছোটকর্তা ছটফট করেছে!

সপ্তাহখানেক নিজের নতুন অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর সে আমার সঙ্গে ভাব করল।

বাড়িতে সেদিন কুটুম এসেছিল, সঙ্গে এসেছিল এক গাদা রসগোল্লা আর সন্দেশ। প্রকাশ্য ভাগটা প্রকাশ্যে খেয়ে ভাঁড়ার ঘরে গোপন ভাগটা মুখে পুরে চলেছি, কোথা থেকে সে এসে খপ করে হাত ধরে ফেলল। রাগ করে মুখের দিকে তাকাতে সে এমন ভাবে হাসল যে লজ্জা পেলাম।

বলল, দরজার পাশ থেকে দেখছিলাম, আর কটা খাচ্ছ গুনছিলাম। যা খেয়েছ তাতেই বোধহয় অসুখ হবে, আর খেয়ো না। কেমন?

ভর্ৎসনা নয়, আবেদন। মার কাছে ধরা পড়লে বকুনি খেতাম এবং এক খাবলা খাবার তুলে নিয়ে ছুটে পালাতাম। এর

আবেদনে হাতের খাবার ফেলে দিলাম। সে বলল, লক্ষী ছেলে। এসে জল খাবে।

বাড়ির সকলে কুটুম নিয়ে অন্যত্র ব্যস্ত ছিল, জল খেয়ে আমি রান্না ঘরে আসন পেতে তার কাছে বসলাম। এতদিন তার গম্ভীর

মুখই শুধু দেখেছিলাম, আজ প্রথম দেখলাম, সে নিজের মনে হাসছে।

আমি বললাম, বামুনদি-

সে চমকে হাসি বন্ধ করল। এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি তাকে গাল দিয়েছি। বুঝতে না পেরেও অপ্রতিভ হলাম।

কি হলো বামুনদি?

সে এদিক ওদিক তাকাল। ডালে খানিকটা নুন ফেলে দিয়ে এসে হঠাৎ আমার গা ঘেঁষে বসে পড়ল। গম্ভীর মুখে বলল, আমায় বামুনদি বোলো না খোকা। শুধু দিদি বোলো। তোমার মা রাগ করবেন দিদি বললে?

আমি মাথা নাড়লাম। সে ছোট এক নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে এত কাছে টেনে নিল যে আমার প্রথম ভারি লজ্জা করতে লাগল।

তারপর কিছুক্ষণ আমাদের যে গল্প চলল সে অপূর্ব কথোপকথন মনে করে লিখতে পারলে সাহিত্যে না হোক আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান লেখা হয়ে উঠত।

হঠাৎ মা এলেন। সে দুহাতে আমাকে একরকম জড়িয়েই ধরে ছিল, হাত সরিয়ে ধরা পড়া চোরের মতো হঠাৎ বিব্রত হয়ে উঠল, দুচোখে ভয় দেখা দিল। কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। পরক্ষণে আমার কপালে চুম্বন করে মাকে বলল, এত কথা কইতে পারে আপনার ছেলে।

তখন বুঝিনি, আজ বুঝি স্নেহে সে আমায় আদর করেনি, নিজের গর্ব প্রতিষ্ঠার লোভে। মা যদি বলতেন, খোকা উঠে আয়,- যদি কেবল মুখ কালো করে সরে যেতেন, পরদিন থেকে সে আর আসত না। পনের টাকার খাতিরেও না, স্বামীপুত্রের অনাহারের তাড়নাতেও না।

মা হাসলেন। বললে, ও ওইরকম। সারাদিন বকবক করে। বেশি আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে।

বলে মা চলে গেলেন। তার দুচোখ দিয়ে দুফোঁটা দুর্বোধ্য রহস্য টপ টপ করে ঝরে পড়ল। মা অপমান করলে তার চোখ হয়তো শুকনোই থাকত, সম্মানে, চোখের জল ফেলল! সে সম্মানের আগাগোড়া করুণা ও দয়া মাখা ছিল, সেটা বোধহয় তার সইল না। 


নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা :

অনাড়ম্বর- জাঁকজমকহীন। অনাহারে- আহারের অভাবে বা খাদ্যের অভাবে। অপ্রতিভ- অপ্রস্তুত; হতবুদ্ধি। আস্কারা- প্রশ্রয়। উপেক্ষা- তুচ্ছ তাচ্ছিল্য; অযত্ন। কৃতজ্ঞ- যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে। ক্ষিপ্রতা- দ্রুত কার্য সম্পাদন। তৎক্ষণাৎ- সাথে সাথে। দুর্বোধ্য- যা বুঝতে পারা কঠিন। নিঃসঙ্কোচ- সংকোচ শূন্য; কুণ্ঠাহীন। পরদিন থেকে সে আর আসত না- না আসার কারণ আত্মসম্মান; মমতাদি টাকার জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়েছে সত্য, কিন্তু তাকে অসম্মান করলে বা সন্দেহের চোখে দেখলে নিজে অপমানিতবোধ করে চাকরিত্যাগের সাহস তার ছিল। পর্দা ঠেলে উপার্জন- এখানে নারীদের অন্তঃপুরে থাকার প্রথাভঙ্গ করে বাইরে এসে আয়-রোজগার করা বোঝাচ্ছে। বাছা- বৎস বা অল্পবয়সী সন্তান। বামুনদি- ব্রাহ্মণদিদির সংক্ষিপ্ত রূপ। আগে রান্না বা গৃহকর্মে যে ব্রাহ্মণকন্যাগণ নিয়োজিত হতেন তাদের কথ্যরীতিতে বামুনদি ডাকা হতো। বিশীর্ণ- বিশেষ ভাবে শীর্ণ বা দুর্বল। বিস্মিত- অবাক, চমৎকৃত। ভর্ৎসনা- তিরস্কার। রূঢ়- কর্কশ, কঠোর। 


সারসংক্ষেপ :

মমতা ভদ্রঘরের মেয়ে। আর্থিক অনটনে পড়ে অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছে। তার কাজের হাত ভালো। আচরণ সংযত। নিজের অবস্থা সম্পর্কে সে যথেষ্ট সতর্ক। কারো করুণাও চায় না, বাড়তি মনোযোগও চায় না। কাজের ও আচরণের সৌন্দর্যে সে সবার ভালোবাসা অর্জন করল। বাড়ির ছোট ছেলেটি তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে ভাই-বোনের মিষ্টি সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কের মধ্যে নিজের মর্যাদা যেন রক্ষিত থাকে, সেদিকে তার তীক্ষ্ণ নজর ছিল।


পাঠ-২

মূলপাঠ

তিন চার দিন পরে তার গালে তিনটে দাগ দেখতে পেলাম। মনে হয়, আঙ্গুলের দাগ। মাস্টারের চড় খেয়ে একদিন অবনীর গালে যে রকম দাগ হয়েছিল তেমনি। আমি ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম, তোমার গালে আঙ্গুলের দাগ কেন? কে চড় মেরেছে?

সে চমকে গালে হাত চাপা দিয়া বলল, দূর! তারপর হেসে বলল, আমি নিজে মেরেছি! কাল রাত্রে গালে একটা মশা বসেছিল, খুব রেগে-

মশা মারতে গালে চড়! বলে আমি খুব হাসলাম। সেও প্রথমটা আমার সঙ্গে হাসতে আরম্ভ করে গালে হাত ঘষতে ঘষতে আনমনা ও গম্ভীর হয়ে গেল। তার মুখ দেখে আমারও হাসি বন্ধ হয়ে গেল। চেয়ে দেখলাম, ভাতের হাঁড়ির বুদবুদফাটা বাষ্পে কি দেখে যেন তার চোখ পলক হারিয়েছে, নিচের ঠোঁট দাঁতে দাঁতে কামড়ে ধরেছে, বেদনায় মুখ হয়েছে কালো।

সন্দিগ্ধ হয়ে বললাম, তুমি মিথ্যে বলছ দিদি। তোমায় কেউ মেরেছে।

সে হঠাৎ কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, না ভাই, না। সত্যি বলছি না। কে মারবে?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে হলো। তখন কি জানি তার গালে চড় মারার অধিকার একজন মানুষের আঠার আনা আছে! কিন্তু চড় যে কেউ একজন মেরেছে সে বিষয়ে আমার সন্দেহ ঘুচল না। শুধু দাগ নয়, তার মুখ চোখের ভাব, তার কথার সুর সমস্ত আমার কাছে ওকথা ঘোষণা করে দিল। বিবর্ণ গালে তিনটি রক্তবর্ণ দাগ দেখতে দেখতে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি গালে হাত বুলিয়ে দিতে গেলাম, কিন্তু সে আমার হাতটা টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরল।

চুপি চুপি বলল, কারো কাছে যা পাই না, তুমি তা দেবে কেন?

আমি অবাক হয়ে বললাম, কি দিলাম আমি?

এ প্রশ্নের জবাব পেলাম না। হঠাৎ সে তরকারী নামাতে ভারি ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পিঁড়িতে বসামাত্র খোঁপা খুলে পিঠ ভাসিয়া একরাশি চুল মেঝে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল কি একটা অন্ধকার রহস্যের আড়ালে সে যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলল।

রহস্য বৈকি। গালে চড়ের দাগ, চিরদিন যে ধৈর্যময়ী ও শান্ত তার ব্যাকুল কাতরতা, ফিসফিস করে ছোট ছেলেকে শোনানো; কারও কাছে যা পাই না তুমি তা দেবে কেন? বুদ্ধির পরিমাণের তুলনায় এর চেয়ে বড় রহস্য আমার জীবনে কখনো দেখা দেয়নি! ভেবেচিন্তে আমি তার চুলগুলি নিয়ে বেণী পাকাবার চেষ্টা আরম্ভ করে দিলাম। আমার আশা প‚র্ণ হলো সে মুখ ফিরিয়ে

হেসে রহস্যের ঘোমটা খুলে সহজ মানুষ হয়ে গেল।

বিকালে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা, তোমার বরের চাকরি হলে তুমি কি করবে?

তুমি কি করতে বল? হরির লুট দেব? না তোমায় সন্দেশ খাওয়াব।

ধেৎ তা বলছি না। তোমার বরের চাকরি নেই বলে আমাদের বাড়ি কাজ করছ তো চাকরি হলে করবে না?

সে হাসল, করব। এখন করছি যে!

তোমার বরের চাকরি হয়েছে।

হয়েছে বলে সে গম্ভীর হয়ে গেল। 

আহা স্বামীর চাকরি নেই বলে ভদ্রলোকের মেয়ে কষ্টে পড়েছে, পাড়ার মহিলাদের কাছে মার এই মন্তব্য শুনে মমতাদির বরের চাকরির জন্য আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলাম। তার চাকরি হয়েছে শুনে পুলকিত হয়ে মাকে সংবাদটা শুনিয়ে দিলাম।

মা তাকে ডেকে পাঠালেন, তোমার স্বামীর চাকরি হয়েছে?

সে স্বীকার করে বলল, হয়েছে। বেশি দিন নয়, ইংরাজি মাসের পয়লা থেকে।

মা বললেন, অন্য লোক ঠিক করে দিতে পারছ না বলে কি তুিম কাজ ছেড়ে দিতে ইতস্তত করছ? তার কোনো দরকার নেই।

আমরা তোমায় আটকে রাখব না। তোমার কষ্ট দ‚র হয়েছে তাতে আমরাও খুব সুখী। তুমি ইচ্ছে করলে এবেলাই কাজ ছেড়ে দিতে পার, আমাদের অসুবিধা হবে না।

তার চোখে জল এল, সে শুধু বলল, আমি কাজ করব।

মা বললেন, স্বামীর চাকরি হয়েছে তবু?

সে বলল, তাঁর সামান্য চাকরি, তাতে কুলবে না মা। আমায় ছাড়বেন না। আমার কাজ কি ভালো হচ্ছে না?

মা ব্যস্ত হয়ে বললেন, অমন কথা তোমার শত্রæও বলতে পারবে না মা। সেজন্য নয়। তোমার কথা ভেবেই আমি বলছিলাম।

তোমার ওপর মায়া বসেছে, তুমি চলে গেলে আমাদেরও কি ভালো লাগবে?

সে একরকম পালিয়ে গেল। আমি তার পিছু নিলাম। রান্নাঘরে ঢুকে দেখলাম সে কাঁদছে। আমায় দেখে চোখ মুছল।

আচমকা বলল, মিথ্যে বললে কি হয় খোকা?

মিথ্যে বললে কি হয় জানতাম। বললাম, পাপ হয়।

গুরুনিন্দা বাঁচাতে মিথ্যে বললে?

এটা জানতাম না। গুরুনিন্দা পাপ, মিথ্যা বলা পাপ। কোনটা বেশি পাপ সে জ্ঞান আমার জন্মায়নি। কিন্তু না জানা কথা বলেও সান্ত¡না দেওয়া চলে দেখে বললাম, তাতে একটুও পাপ হয় না। সত্যি! কাঁদছ কেন?

তখন তার চাকরির একমাস বোধহয় প‚র্ণ হয়নি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরবার সময় দেখলাম জীবনময়ের গলির মোড়ে ফেরিওয়ালার কাছে কমলা লেবু কিনছে।

সঙ্গে নেবার ইচ্ছ নেই টের পেয়েও এক রকম জোর করেই বাড়ি দেখতে গেলাম। দুটি লেবু কিনে আমাকে সঙ্গে নিয়ে সে গলিতে ঢুকল। বিশ্রী নোংরা গলি। কে যে ঠাট্টা করে এই যমালয়ের পথটার নাম জীবনময় লেন রেখেছিল! গলিটা আস্ত ইট দিয়ে বাঁধানো, পায়ে পায়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। দুদিকের বাড়ির চাপে অন্ধকার, এখানে ওখানে আবর্জনা জমা করা আর একটা দূষিত চাপা গন্ধ। আমি সঙ্কুচিত হয়ে তার সঙ্গে চলতে লাগলাম। সে বলল, মনে হচ্ছে পাতালে চলেছ, না?

সাতাশ নম্বরের বাড়িটা দোতলা নিশ্চয়, কিন্তু যত ক্ষুদ্র দোতলা হওয়া সম্ভব। সদর দরজার পরেই ছোট একটি উঠান, মাঝামাঝি কাঠের প্রাচীর দিয়ে দুভাগ করা। নিচে ঘরের সংখ্যা বোধহয় চার, কারণ মমতাদি আমায় যেভাগে নিয়ে গেল সেখানে দুখানা ছোট ছোট কুঠরির বেশি কিছু আবিষ্কার করতে পারলাম না। ঘরের সামনে দুহাত চওড়া একটু রোয়াক, একপাশে একশিট করোগেট আয়রনের ছাদ ও চটের বেড়ার অস্থায়ী রান্নাঘর। চটগুলি কয়লার ধোঁয়ায় কয়লার বর্ণ পেয়েছে।

সে আমাকে শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে টুলে বসাল। ঘরে দুটি জানালা আছে এবং সম্ভবত সেই কারণেই শোবার ঘর করে অন্য ঘরখানার চেয়ে বেশি মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জানালা দুটির এমনি অবস্থান যে আলো যদিও কিছু কিছু আসে, বাতাসের আসা যাওয়া একেবারে অসম্ভব। সুতরাং পক্ষপাতিত্বের যে খুব জোরালো কারণ ছিল তা বলা যায় না। সংসারের সমস্ত জিনিসই প্রায় এঘরে ঠাঁই পেয়েছে। সব কম দামী শ্রীহীন জিনিস। এই শ্রীহীনতার জন্য সযতেœ গুছিয়ে রাখা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিশৃঙ্খলতার অন্ত নেই। একপাশে বড় চৌকি, তাতে গুটানো মলিন বিছানা। চৌকির তলে একটি চরকা আর ভাঙ্গা বেতের বাস্কেট চোখে পড়ে, অন্তরালে হয়তো আরও জিনিস আছে। ঘরের এক কোণে পাশাপাশি রক্ষিত দুটি ট্রাংকÑ দুটিরই রঙ চটে গেছে, একটির তালা ভাঙ্গা। অন্য কোণে কয়েকটা মাজা বাসন, বাসনের ঠিক ঊর্ধ্বে কোনাকুনি টাঙ্গানো দড়িতে খানকয়েক কাপড়। এই দুই কোণের মাঝামাঝি দেওয়াল ঘেঁষে পাতা একটি ভাঙ্গা টেবিল, আগাগোড়া দড়ির ব্যান্ডেজের জোরে কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলে কয়েকটা বই খাতা, একটি অল্প দামী টাইমপিস, কয়েকটা ওষুধের শিশি, একটা মেরামত করা আর্সি, কয়েকটা ভাঁজ করা সংবাদপত্র, এই সব টুকিটাকি জিনিস। টেবিলের ঊর্ধ্বে দেওয়ালের গর্তের তাকে কতকগুলি বই। 

ঘরে আর একটি জিনিস ছিল- একটি বছর পাঁচেকের ছেলে। চৌকিতে শুধু মাদুরের ওপরে উপুড় হয়ে শুয়ে সে ঘুমিয়ে ছিল। মমতাদি ঘরে ঢুকেই ব্যস্ত হয়ে ছেলেটির গায়ে হাত দিল, তারপর গুটানো বিছানার ভেতর থেকে লেপ আর বালিশ টেনে বার করল। সন্তর্পণে ছেলেটির মাথার তলে বালিশ দিয়ে লেপ দিয়ে গা ঢেকে দিল।

বলল, কাল সারারাত পেটের ব্যথায় নিজেও ঘুমোয়নি, আমাকেও ঘুমোতে দেয়নি। উনি তো রাগ করেÑ কই, তুমি লেবু খেলে না।?

আমি একটা লেবু খেলাম। সে চুপ করে খাওয়া দেখে বলল, মুড়ি ছাড়া ঘরে কিছু নেই, দোকানের বিষও দেব না, একটা লেবু খাওয়াতে তোমাকে ডেকে আনলাম!

আমি বললাম, আর একটা লেবু খাব দিদি।

সে হেসে লেবু দিল, বলল, কৃতার্থ হলাম। সবাই যদি তোমার মতো ভালোবাসত!

ঘরে আলো ও বাতাসের দীনতা ছিল। খানিক পরে সে আমায় বাইরে রোয়াকে মাদুর পেতে বসাল। কথা বলার সঙ্গে সংসারের কয়েকটা কাজও করে নিল। ঘর ঝাঁট দিল, কড়াই মাজল, পানি তুলল, তারপর মশলা বাটতে বসল। হঠাৎ বলল, তুমি এবার বাড়ি যাও ভাই। তোমার খিদে পেয়েছে। 


নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা :

অন্তরালে- আড়ালে। কৃতার্থ- সফল; ধন্য। দীনতা- দারিদ্র্য। প্রাচীর- দেওয়াল। সন্তর্পণে- অতি যত্নে; অতি সাবধানে। সন্দিগ্ধ- সন্দেহযুক্ত। হরির লুট- হিন্দুদের হরি-সংকীর্তনের পর ভক্তদের মধ্যে হরির নামে বাতাসা ছড়িয়ে দেয়া।

সারসংক্ষেপ :

মমতার গালের দাগ থেকে বোঝা যায়, সে স্বামীর নির্যাতনের শিকার। কিন্তু সে কথা কারো কাছে সে স্বীকার করে না। স্বামীর চাকরি হওয়ার পরেও সে গৃহপরিচারিকার কাজ ছেড়ে দেয় না। এ থেকে তার পরিবারের দারিদ্র্য আর স্বামীর অসহযোগিতার বিষয়ে ধারণা হয়। এক নোংরা গলিতে ছোট্ট ঘরে সে থাকে। দমবন্ধ পরিবেশ। অতিথি আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য রক্ষা করে সমস্ত পরিস্থিতি সুন্দরভাবে সামলানোর ক্ষমতা আছে মমতাদির।


সৃজনশীল প্রশ্ন-১

তরাই নদীর তীরে একটি ইটের ভাটায় কাজ করে গোবিন্দ। সে সেখানে কাজ করে বেশ ভালোভাবে। সবার সঙ্গে তার ভদ্র আচরণ। তার সততা ও ভদ্র আচরণ সত্তে¡ও ইট ভাটার মালিক তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। ঠিকমতো তাকে বেতন দেয় না। নিরীহ গোবিন্দ নীরবে সকল কিছু সহ্য করে যায়।

ক. মমতাদির বয়স কত?

খ. ‘পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছেন।’ Ñকে এবং কেন?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মমতাদি’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে কী? Ñআলোচনা করুন।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পে রয়েছে আলাদা রকমের বাস্তবতাবোধ।” Ñবিশ্লেষণ করুন।

সৃজনশীল প্রশ্ন-২

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার মহান দার্শনিক প্লেটো। তিনি অবলোকন করেছেন যে, মানব চরিত্রের সুন্দর বিকাশ আর মহৎ গুণাবলীর সমাবেশে তার অনন্য পরিচয় ফুটে উঠে। এজন্য তাকে কর্মমুখর জীবন যাপন করতে হয়। কর্মময় জীবনের বিচিত্র ও মহৎ অবদানের মাধ্যমে মানুষের জীবনের গৌরবময় বিকাশ সাধিত হয়।

ক. মমতাদির গালে কয়টি দাগ ছিল?

খ. ‘মমতাদি’ গল্পকথককে বাইরের রোয়াকে বসাল কেন?

গ. উদ্দীপকটির সঙ্গে ‘মমতাদি’ গল্পের কোন চরিত্রের সাযুজ্য রয়েছে? Ñআলোচনা করুন।

ঘ. “মানুষের গৌরব নিহিত রয়েছে তার কর্মময় জীবনে।” Ñউদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিচার করুন। 


নমুনা উত্তর : সৃজনশীল প্রশ্ন

সৃজনশীল প্রশ্ন-১ এর নমুনা উত্তর:

ক. মমতাদির বয়স ২৩ বছর।

খ. সংসারে দারিদ্র্যের কারণে মমতাদি পর্দা ঠেলে বাইরে এসেছেন।  স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে মমতাদির সংসার। চার মাস ধরে তার স্বামীর চাকরি নেই। সংসারে অভাব। কোনো মতেই সংসার আর চলছে না। তাই বাধ্য হয়ে পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য মমতাদি বাইরে এসেছেন।

গ. উদ্দীপকের গোবিন্দের সাথে মমতাদির সাদৃশ্য রয়েছে চাকুরির ধরন ও চাকুরিতে তাদের মনোনিবেশে।  দারিদ্র্যের কারণে অনেক সময় মানুষকে প্রত্যাশার চাইতে ছোট কাজ করতে হয়। তাই বলে তার সম্মানহানী হয় না। নিজের ব্যক্তিত্ব ও কর্মগুণে সে সকলের মন জয় করতে পারে। এভাবে সে তার কর্মে একটি মর্যাদাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারে। উদ্দীপকের গোবিন্দ ও গল্পের মমতাদি এই শ্রেণির চরিত্র।

 মমতাদি এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী। সে গৃহকর্মী হিসেবে নীরবে কাজ করে যায়। মনিব যে ভাবে উপদেশ দেয় ঠিক সে ভাবে সে কাজ সম্পন্ন করে। যে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, সেক্ষেত্রে সে অনর্থক প্রশ্ন না করে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে তা সমাধান করে ফেলে। উদ্দীপকের গোবিন্দও ইট ভাটায় চাকরি করে। সে সবার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এবং মনোযোগ দিয়ে কাজ করে। কর্মীর অবস্থান কর্ম দ্বারা নিরূপিত হয়। কর্মী হিসেবে ‘মমাতাদি’ গল্পের মমতাদি এবং উদ্দীপকের গোবিন্দ একই রকমের চরিত্র।

ঘ. উদ্দীপকের বাস্তবতা ও মমতাদি গল্পের বাস্তবতা আলাদা।  মানুষ তার জীবনকে প্রকাশ করে কর্মের মাধ্যমে। কর্মময় জীবন তার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। সে তার জীবনকে কর্মময় জীবনের বৈচিত্র্য ও মহৎ অবদানের মাধ্যমে বিকশিত করে তোলে। ফুটে উঠে তার অনন্য পরিচয়। আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পে তারই পরিচয় পাই।

 ‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মে নিয়োজিত মমতাদির প্রতি মানবিক আচরণ করার দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। সেই সঙ্গে গৃহকর্মের কাজে একজন গৃহকর্মীর আন্তরিকতা, একনিষ্ঠতা, দক্ষতা ও পরিমিত ভাষা প্রয়োগের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। 

উদ্দীপকে একজন ইট ভাটার শ্রমিকের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকের বাস্তবতা ও গল্পের বাস্তবতা ভিন্ন। উদ্দীপকে গোবিন্দ ইট ভাটায় কাজ করলেও সে সবার সাথে ভদ্র ব্যবহার করে এবং সততার সাথে কাজ করে। তবে মালিক তাকে উপযুক্ত মাইনে দেয় না বরং তার সাথে খারাপ আচরণ করে। পক্ষান্তরে ‘মমতাদি’ গল্পের বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। মমতাদি অভাবের তাড়নায় পর্দা ঠেলে বাইরে এসে অন্যের গৃহে কাজ করে, তার সততা ও কর্মদক্ষতায় বাড়ির লোকজন খুশি। সবাই তার সাথে ভালো আচরণ করে। আর মমতাদি যে কোন পরিস্থিতিতে নির্দেশ ছাড়াই নিজের মত কাজ করে এবং পরিবারের সবার ভালোবাসা ও সম্মান লাভ করে। তাই, উদ্দীপক ও মমতাদি গল্পের বাস্তবতা আলাদা।


অ্যাসাইনমেন্ট : নিজে করুন

সৃজনশীল প্রশ্ন :

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে বিকালে হাজির হলুম ঐশীবুর বাড়িতে। বুবু আমাকে দুটো পেয়ারা খেতে দিলেন। আমি একটা খেলাম। বুবু আমার খাওয়া দেখে বললেন, ঘরে মুড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। আমি বললাম, তাহলে আর একটা পেয়ারা খাই। বুবু হাসলেন, এ হাসি যেন কতকালের জমানো কষ্টের। বললেন, খুশি হয়েছি। সবাই যদি তোর মতো ভালোবাসত।

ক. কত বৎসর বয়সে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিবারাত্রির কাব্য’ রচনা করেন?

খ. ‘বেশি আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে।’ -বুঝিয়ে বলুন।

গ. উদ্দীপকের বুবু চরিত্রটি ‘মমতাদি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে ? -আলোচনা করুন।

ঘ. ‘উদ্দীপকের বুবু ও মমতাদির অপত্য স্নেহ যেন একইসূত্রে গাঁথা।’ -মন্তব্যটি বিচার করুন।  

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Contexto Answer Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...