ইন্দাস সভ্যতার বৈশিষ্ট্য?
ইন্দাস সভ্যতা (Harappan Civilization) ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম নগরসভ্যতাগুলোর একটি, যা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫০০-১৭০০ সালের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল। এটি সিন্ধু নদ ও তার শাখা নদীগুলোর তীরে গড়ে ওঠে। সভ্যতাটি শহর পরিকল্পনা, স্থাপত্য, অর্থনীতি, এবং সংস্কৃতির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
ইন্দাস সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. ভৌগোলিক অবস্থান
- ইন্দাস সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তান, উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং পূর্ব আফগানিস্তানের বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিল।
প্রধান নগরগুলো:
- হরপ্পা: প্রথম আবিষ্কৃত শহর (বর্তমান পাকিস্তান)।
- মহেঞ্জোদারো: সেরা পরিকল্পিত শহর।
- অন্যান্য শহর: ধোলাভিরা, কালীবানগান, লোথাল।
২. উন্নত নগর পরিকল্পনা
- গ্রিড পদ্ধতিতে শহর: শহরগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা, যেখানে রাস্তা ছিল সোজা এবং সমান্তরাল।
- পাকাবাড়ি: ইটের তৈরি বাড়ি, যা একাধিক তলবিশিষ্ট ছিল।
- নালা-নর্দমা ব্যবস্থা: শহরের প্রতিটি বাড়ি উন্নত নিকাশী ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
- স্নানাগার (Great Bath): মহেঞ্জোদারোর বৃহৎ স্নানাগার একটি ধর্মীয় বা সামাজিক স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
৩. অর্থনীতি
- কৃষি: প্রধান ফসল ছিল গম, যব, তুলা, মটর, এবং খেজুর।
বাণিজ্য:
- অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছিল সমৃদ্ধ।
- মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে সামুদ্রিক এবং স্থলপথে বাণিজ্য ছিল।
- লোথাল ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী।
- পণ্য উৎপাদন: সিলমোহর, পুঁতির গহনা, তামা ও ব্রোঞ্জের অস্ত্র ও সরঞ্জাম।
৪. ধর্ম ও সংস্কৃতি
- ধর্ম:
- পূজিত হতো প্রকৃতি ও প্রাণিজগৎ।
- শিব বা পশুপতি সদৃশ মূর্তি এবং মাতৃদেবীর প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে।
- পবিত্র পশু হিসেবে ষাঁড় এবং ইউনিকর্নের চিত্র পাওয়া গেছে।
- কৃত্য: মৃতদেহ সমাহিত করার প্রথা ছিল।
৫. লিখন পদ্ধতি
- লিপি: ইন্দাস সভ্যতার লিপি ছিল পিক্টোগ্রাফিক (চিত্রলিপি), যা এখনও সম্পূর্ণরূপে পাঠোদ্ধার করা যায়নি।
- সিলমোহর: সিলমোহরে প্রাণী ও প্রতীক চিত্রিত, যা তাদের ভাষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৬. প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান
- পরিমাপ ও ওজন: নির্ভুল ওজন এবং পরিমাপ ব্যবস্থার উদ্ভাবন।
- ধাতু শিল্প: তামা, ব্রোঞ্জ এবং স্বর্ণের ব্যবহার।
- পানি সংরক্ষণ: জলাধার এবং কুয়োর মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
৭. সামাজিক সংগঠন
- সমাজ শ্রেণিভিত্তিক ছিল। ধনী এবং দরিদ্রদের বাড়িগুলোর আকার এবং অবস্থানে পার্থক্য ছিল।
- ব্যবসায়ী এবং কারিগররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
৮. পতনের কারণ
ইন্দাস সভ্যতার পতনের কারণ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: নদী পথ পরিবর্তন, খরা বা বন্যা।
- আর্যদের আগমন: আর্যদের আগ্রাসন সভ্যতাকে ধ্বংস করে।
- অর্থনৈতিক অবনতি: বাণিজ্যের হ্রাস এবং কৃষি সমস্যার কারণে।
ইন্দাস সভ্যতার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
- প্রাচীনতম পরিকল্পিত শহর: নগর পরিকল্পনার নিদর্শন আজও আধুনিক শহর পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: সভ্যতার সমৃদ্ধি এবং উন্নত বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে ভূমিকা রেখেছে।
- লেখা ও প্রযুক্তি: প্রাচীন লিপি এবং ধাতু প্রযুক্তি মানব সভ্যতার অগ্রগতির একটি ধাপ।
উপসংহার
ইন্দাস সভ্যতা তার সময়ের তুলনায় অত্যন্ত উন্নত ছিল। তাদের নগর ব্যবস্থা, বাণিজ্য, এবং সংস্কৃতি প্রাচীন পৃথিবীর উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
Post a Comment